আজ আলি চাচা সকাল থেকে একটু বেশিই ব্যাস্ত। তিনটে গরুর দুধ দুয়ে গরুগুলোকে জাবনা দেওয়ার কাজ শেষ করেই দুধ আর চিনি দিয়ে কড়া পাকের সন্দেশগুলো বানাতে গিন্নিকে সাহায্য করছেন । ফাদার যোসেফ আটটার মধ্যে ওনার কাছে পৌঁছাতে বলেছেন । ফাদার যোসেফ সই কবে কি যেন একটা বই লিখে খুব বিখ্যাত হয়েছিলেন কিন্তু আর দেশ ফেরনিন ।এই অঞ্চলে এসেছিলেন নদী আর প্রকৃতির শোভা দেখতে । কিন্তু কে জানেতা নদীর পাড়ের এই ব্রিক ফিল্ড গুলোর ঐ অসহায় কচি কচি মুখগুলো তাঁকে আর ফিরতে দেবে না । যে মানুষগুলো বড় বড় ইমারত তৈরির প্রধান উপকরণ ইট তৈরি করে, এটুকু ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাগুলো কাঁচা ইট বয়ে নিয়ে গিয়ে কি নিপুণতায় সাজিয়ে রাখে। যাদের কাছে দুবেলা দুমুঠো পেট ভরানোটাই স্বপ্ন । ভালো জামাকাপড়, রুক্ষ চুলগুলোয় তেল এসবই যাদের কাছে কল্পনা । তাদের কাছে আবার পড়াশোনা! ফাদার যোসেফের এদের ছেড়ে ফিরে যাওয়া আর সম্ভব হয়নি । কাজের শেষে এদের পড়াশোনা করানোর সংকল্পে তিনি দৃঢ় । ফাদার যোসেফের সাথে জুড়ে গেছেন এলাকার কিছু অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শিক্ষিকা অনিলবাবু,ফয়জলসাহেব, রমাদি, সুহানাদি প্রমুখরা। আর আছে কিছু স্কুল কলেজে পড়া এ গ্রামেরই ছেলেমেয়ে । ওরা সবাই মিলে ঠিক করেছেন আজ নদীর ধারে খিচুরি আর চাটনি বানিয়ে ঐ ছোট্ট ছোট্ট গুলোকে নিয়ে সারাদিন হৈ হৈ করে কাটাবে। তাতে আলি চাচা বলে এেসেছন তিনি তার গরুর দুধের মিষ্টি বানিয়ে নিয়ে যাবেন সবার জন্য । তাই আজেকর দধুটা বিক্রি করেননি । ঐদিকে রমেশ ব্যাস্ত তার বাগানের সবেদা পাড়তে সেও যে ফাদারকে বলে এেসেছ তার বাগানের সবেদা খাওয়াবে সে আজ সবাইেক। ফাদার যোসেফ খুব ভোরে বেরিয়েছিলেন । কিছু বই শহর থেকে আসার কথা ছিল সেগুলো st থেক আনেত । ভোর পাঁচটার সেগুলো স্টেশনে নামিয়ে দেবে ।
স্টেশন থেকে এই গ্রামে আসতে ঘণ্টা দইু তো লাগেব। ফেরার পথে ফাদার দেখলেন গ্রামের মন্দিরে আলপনা দিতে ব্যাস্ত কিছু ছেলেমেয়ে । আলপনা দেওয়ার কারন হিসেবে জানাল আজ যীশুর জন্মদিন । মসজিদের সামনে কিছু ছেলেমেয়ে রাংতা দেওয়া পতাকা সাজাচ্ছে অসাধারণ নিপুণতার সাথে । তারাও বলল একই কথা। নিজের খড় দিয়ে ছাওয়া মাটির ছোট্ট ঘরটার পাশে যে এক চিলতে ঘরটিতে যীশুকে রেখেছেন ফাদার, ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাগুলো ফুল দিয়ে সাজিয়েছে সে ঘরখানি । আর যে বোর্ডটিতে খুদে গুলোর হাতে ধরে অক্ষর শেখান তাতে আঁকাবাঁকা হরফে লেখা যীশু আজ তোমার জন্মদিন । ফাদার যখন নদীর ধারে এলেন শেষ ঝটকাটি তখন লাগল দেখতে পেলেন নদীর ধারে ছোট্ট গ্রামের সবাই জড়ো হয়েছে, বাড়িতে চাল ডাল তরিতরকারি যার যা ছিল এনে রান্না হচ্ছে পুরো গ্রাম আজ একসাথে খাবে । গ্রামের পুরুষরা রান্না করছে মেয়েরা সবজি কাটছে । পাড়ার সুধাপিসি রুক্ষ লাল চুল গুলোয় তেল দিয়ে আঁচড়ে দিচ্ছে । সামিমের মা তাদের গায়ে ডলে ডলে সাবান মাখিয়ে নদীর জলে স্নান করিয়ে দিচ্ছে । রমাদি কেক বানিয়ে এেনেছন, সুহানাদি এনেছেন ডালের বরফি । তাই শুনে চাটুজ্জে গিন্নি বললেন জন্মদিন যীশুর পায়েস না হলে হয়। তাই তিনি পায়েস বানিয়ে এনেছেন । সারাটা দিন কেটে গেল হাসি খুশি খাওয়া দাওয়ায়। আজ সন্ধ্যায় মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি, মসজিদের আজান, আর ফাদারের প্রেয়ারের শব্দ সব একাকার হয়ে গেছে, আর একটা প্রার্থনাই ধ্বনিত সবাই যেন পেট পুরে ডাল ভাত টুকু পায়।
বৈশাখী দাস