Article

5

ইলিশ-কুমারী

ইলিশের ক্ষেত্রে আমি চকচকে মসৃণ রূপোলি আঁশের কিশোরী পছন্দ করি। তাকে হতে হবে অসূর্যম্পশ্যা। জলের আঁধারে থাকতে থাকতে তার মনের মধ্যে আকাশ দেখার ঝড় উঠবে মাঝে মাঝেই। সেই ঝড়ের তোড়ে খড়কুটোর মতন সব বাঁধন ছুটে যাবে। অচেনা, অদেখা পুরুষের জন্য মনকেমন তাকে ঘর ভুলিয়ে পথে নামাবে বাঁশিওয়ালার মতন।

পথে যেতে যেতে কিছু ভ্রষ্টা গর্ভিনী কুমারীমাতার সঙ্গ পাবে। কলকলিয়ে, খলবলিয়ে সাঁতারাতে সাঁতরাতে তার শরীরের বিভিন্ন খাঁজ-খোজ থেকে অতিরিক্ত মেদসমূহ ঝরে যাবে। উল্টে পাল্টে চিৎ সাঁতার কাটতে কাটতে সে ভেসে যাবে। ঠিক যেমন করে বড় ঘরের মেয়েরা হঠাৎ হঠাৎ মন দেওয়ানেওয়া করে ফেলে পথের মানুষের সঙ্গে তেমন করেই মন হারিয়ে ফেলে হারিয়ে যাওয়া মনের মানুষটিকে খুঁজে ফিরবে পথে ঘাটে। পিছনে ফেলে আসবে এক সমুদ্র বৈভব। পথের নেশায় তার চোখ হয়ে উঠবে আরও মদির। চিৎ সাঁতার কাটতে কাটতে মুখে চোখে মেখে নেবে টিপটিপে বৃষ্টির পালক পরশখানি। একসময় ক্লান্ত চোখে জমা হবে ঘর বাঁধার স্বপ্ন। কানকোর লালে মিশে যাবে অস্তমিত সূর্যের শেষ আভাটুকু। সে তখন আলতো করে শরীর ছেড়ে দেবে জলের সোহাগে।

বড় লোকের আদুরী বেটি জানে না, পথের বাঁকে বাঁকে লুকিয়ে থাকা বিপদের কথা। জেলে পাড়া থেকে লুকোনো ঘাতকেরা বেরিয়ে আসে। জাল বিছোয়। সে জালে ধরা পড়ে কুমারী ইলিশ। তার চকচকে আঁশে ঠিকরে ওঠে মানুষের লালসা। জালের ফাঁদে আটকা পড়ে ছটফট করে ওঠে সে। ছাড়াতে গিয়ে আরও বেশি করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে যায় জালে। দুহাত জড়ো করে অনুনয় বিনয় করতে থাকে। নিষ্ঠুর জেলে শুনেও শোনে না। নির্দয় হয়ে টেনে তোলে জাল। নৌকার গলুইয়ে আছাড়ি-বিছাড়ি খায় ইলিশ সুন্দরী। তার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। দুচোখের সমস্ত স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরচুর হয়ে যায়।

তারপর?

তারপর বহু হাত ঘুরে, বহু হিমঘর পার করে সে রক্তচক্ষু মৃত শরীর একদিন এসে পৌঁছয় আমার পাকশালে। আমি তাকে যত্নে অল্প তেলের সোহাগে পর্যাপ্ত আঁচে ভেজে নিই। শেষ আঁচে গরম তেলে গাছ থেকে তুলে আনা কয়েকটা সবুজ কাঁচালঙ্কা অল্প এপিঠ ওপিঠ করে নেড়ে নিই। সুন্দর একটা মন মাতানো খুশবু ওঠে। গরম জুঁইফুল ভাতে ওই সুগন্ধী তেল লবণ মাখিয়ে অল্প অল্প কুমারী ইলিশের টুকরো জিভে তুলে নিই। আমার সমস্ত সত্ত্বায় মিলে যায় মৎসগন্ধী স্বর্গীয় সুস্বাদ। এমন কুমারী ইলিশকে আমি কোনমতেই প্রাণে ধরে সর্ষে বাটার গেরুয়ায় চুবিয়ে যোগিনী সাজাতে পারবো না।

কোনমতেই না।

পৌলোমী মুখার্জী

Facebook
Twitter
LinkedIn

Related Articles

প্রাতে নিদ্রাভঙ্গ হইলে আশালতা কর্ণকুহরে শ্রবণ যন্ত্রটি প্রবিষ্ট করিয়া চলমান দূরভাষটিতে সংযোগ স্থাপন করিল। সম্প্রতি দূরদর্শণের একটি ধারাবাহিক তাহার সমগ্র মনোযোগ আকৃষ্ট করিয়া লইয়াছে। ‘খড়কুটো’

Kantha is a centuries old tradition of stitching patchwork cloth from rags, which evolved from the thrift of rural women in Bengali region off sub

পৌলোমী মুখার্জী
Author Since : 2022

Follow On Instagram
Learn With Us
Our renowned Academy is offering Diploma Courses. Come join us today.

Start typing and press Enter to search